বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৩১ অপরাহ্ন

আদালতের এজলাস থেকে সরছে লোহার খাঁচা

আদালতের এজলাস থেকে সরছে লোহার খাঁচা

স্বদেশ ডেস্ক

দেশের নিম্ন আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে কয়েক দশক আগে স্থাপিত লোহার খাঁচা সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ঢাকার আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা সরানো শুরু হয়েছে। জানা গেছে, ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সিএমএম আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা সরানো হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এবং মহানগর দায়রা জজ আদালতের এজলাসে থাকা লোহার খাঁচাও সরানো হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ২ জুন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এ তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে এসে প্রথম আদালতের এজলাসে স্থাপিত লোহার খাঁচার তৈরি কাঠগড়ায় দাঁড়ান। ওই দিন আদালত থেকে বের হয়ে এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, অভিশপ্ত জীবনের একটা বড় পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। সেটা বুঝলাম যে এই অভিশাপ অনেক উপরে নিয়ে গেছে। অভিশপ্ত জীবনেও একটি শীর্ষ বিন্দু আছে। আজ সে রকম একটা শীর্ষ বিন্দুতে। এই প্রথম লোহার খাঁচায় কাঠগড়াতে দাঁড়ানো। এটা একটা দেখার মতো দৃশ্য। এটা আমার জীবনের একটা স্মরণীয় ঘটনা যে লোহার খাঁচার ভেতরে দাঁড়িয়ে আছি আদালতের কাঠগড়ায়। এ অভিশপ্ত জীবনের একটা অংশ।

গত ১২ জুন ড. মুহাম্মদ ইউনূস দ্বিতীয়বার লোহার খাঁচার তৈরি কাঠগড়ায় দাঁড়ান। ওই দিন তিনি সাংবাদিকদের আদালতের লোহার খাঁচার আসামির কাঠগড়া দাঁড়ানো সম্পর্কে বলেছিলেন, একজন নিরপরাধ নাগরিককে লোহার খাঁচার (আসামির কাঠগড়া) মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে শুনানির সময়, এটা আমার কাছে অত্যন্ত অপমানজনক। এটা গর্হিত কাজ। এটা কারো ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য না হয়। একটা পর্যালোচনা হোক।
তিনি আরো বলেছিলেন, একটা সভ্য দেশে কেন একজন নাগরিককে পশুর মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হবে শুনানির সময়। যেখানে একজন নাগরিক দোষী সাব্যস্ত হননি। অনেক আইনজ্ঞ আছেন, বিচারপক্ষের সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা পর্যালোচনা করে দেখবেন, এটা রাখার দরকার আছে কি নেই? সারা সভ্য দুনিয়ায় যেভাবে হচ্ছে, সেভাবে হবে। আমরা সভ্য দেশের তালিকায় থাকতে পারি।

এরপর গত ১৫ জুলাইও তিনি আদালতে হাজিরা দিতে এসে লোহার খাঁচার বিষয়ে কথা বলেন। ওই দিন তিনি বলেছিলেন, খাঁচার বিষয়টি আমি বারবার বলতে থাকব, কারণ এটা জাতির প্রতি মস্তবড় অপমান। এই অপমান আমাদের সহ্য করা উচিত না। এর ব্যবহার থেকে আমরা মুক্তি পেতে চাই।
জানা গেছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শুক্রবার ঢাকার আদালতের কয়েকটি এজলাস কক্ষ থেকে সরিয়ে ফেলা হয় লোহার খাঁচা। গণপূর্ত বিভাগের লোকজন লোহার খাঁচা সরানের কাজটি করছেন। পর্যায়ক্রমে সব আদালতের খাঁচা সরিয়ে ফেলা হবে।
শনিবার ঢাকার সিএমএম আদালতের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শুক্রবার দু’জন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা সরানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব আদালতের খাঁচা সরিয়ে ফেলা হবে। গণপূর্ত বিভাগের লোকজন লোহার খাঁচা সরানের কাজটি করছেন।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি দেশের নিম্ন আদালতের এজলাস কক্ষে থাকা লোহার খাঁচা বসানো কেন অসাংবিধানিক হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ রুল জারি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করে আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির।

আদালতের এজলাস থেকে লোহার
খাঁচা সরানো বিষয়ে আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির বলেন, সারা দেশে অধঃস্তন আদালত কক্ষে কতগুলো লোহার খাঁচা রয়েছে সে বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সাথে রুলে আদালত কক্ষে লোহার খাঁচার পরিবর্তে কাঠগড়া পুনস্থাপনের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছিলেন। এ ছাড়া আদালত কক্ষে লোহার খাঁচা বসানো কেন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩১, ৩২ ও ৩৫ এর সাথে সাংঘর্ষিক হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছিল। অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ১৯৮৮ সালের পর আদালতের এজলাস কক্ষে লোহার খাঁচা প্রবেশ করেছে। আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা সরিয়ে ফেলাকে নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877